মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
সাদুল্লাপুরে বেগুন ক্ষেতে মোজাইক ভাইরাস: দুশ্চিন্তায় কৃষক কামারপাড়া কলেজে একাদশ শ্রেণির ওরিয়েন্টেশন ক্লাস গাইবান্ধা সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন ক্লাস পলাশবাড়ীতে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করলেন স্বামী সাঘাটায় রূপচাঁদার নামে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত পিরানহা! সাদুল্লাপুর শতবর্ষী বিদ্যালয়ে উন্নয়ন কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত খোলাহাটীতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন কামারজানীতে সামাজিক উন্নয়ন পদক্ষেপ কলেজে নবীণ বরণ অনুষ্ঠান তুলসীঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল শ্রমিকের গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

সুন্দরগঞ্জে বালুমহল না থাকায় অবকাঠামো নির্মাণে বাধাগ্রস্থ

সুন্দরগঞ্জে বালুমহল না থাকায় অবকাঠামো নির্মাণে বাধাগ্রস্থ

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ইট-পাথরের এই যুগে বালু মহল না থাকায় অবকাঠামো নির্মাণে মালিকানা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দারুনভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শুরু করলে বালু নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর ছাড়া কোথাও বালু পাওয়া যায় না। বালুর দাম কম হলেও পরিবহন খরচ অনেক বেশি। তুলনামুলক ভাবে রড় ও সিমেন্টের চেয়ে বালু সংগ্রহ করতে গিয়ে মালিকানা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে। বালুমহল ঘোষণা করার মত যথেষ্ট জায়গা রয়েছে সুন্দরগঞ্জে। কিন্তু প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অন্তরিকতার অভাবে আজও তা সম্ভাব হয়নি। কথাগুলো সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার ঠিকাদার সাগীর খানের। তার ভাষ্য একজন গার্মেন্টস কর্মীও এখন ইটের ঘর নির্মাণ করছেন। সেখানে বালুই হচ্ছে মুখ্য উপকরণ। নিজের পরিত্যক্ত জমি বা পুকুর হতে মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলনে বাঁধা প্রশাসনের। কোন কুল কিনারা না পেয়ে অবশেষে জেলার বাইর থেকে বালু নিয়ে এসে কাজ করতে হচ্ছে। ঠিক একই ভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ কাজ করে আসছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনর আশু সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
একটি পৌরসভা ও পনেরটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলার পরিসর। গাইবান্ধার বৃহত্তর উপজেলা সুন্দরগঞ্জ। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয় প্রবাহিত তিস্তা নদী। এই উপজেলায় বালু বহল ঘোষণার বেশ কয়েকটি জোন রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কেন বালু বহল অনুমোদন দিচ্ছেন না এটি তার জানা নাই বলেন তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম। তার ভাষ্য গত ১০ বছরে উপজেলার সমন্বয় ও আইনশৃঙ্খলার মাসিক সভায় শতাধিকবার আলোচনা করে বালু মহল অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আজও তা অনুমোদন হয়নি। তাঁর ভাষ্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ছোটখাট প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করতে গেলে বাইর থেকে বালু নিয়ে এসে কাজ করতে হচ্ছে। এতে প্রকল্পের ব্যয়ভার বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বালু মহল ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।
পৌরসভার মশিউর রহমান বলেন গত ছয় মাস হল বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছি। ইট, রড় ও সিমেন্ট নিয়ে কোন ভাবনা নেই। অথচ বালু সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোয়াতে হচেছ। পঞ্চগড়ে এক ট্র্যাক ভাল মানের বালুর দাম ৫ হাজার টাকা, আর পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। সেই বালু পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই সপ্তাহ। স্থানীয় ভাবে বালু সংগ্রহ করতে হয়তো ১০ হতে ১৫ হাজার টাকা লাগত। বালু মহল না থাকায় আজ তাদের এ অবস্থা। বাইর হতে বালু সংগ্রহ করে একটি বাসা-বাড়ি নির্মাণে প্রায় ৮০ হতে এক লাখ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।
একই দাবি উল্লেখ করে বেলকার ফরমান আলী বলেন কাঁচা রাস্তায় বালু আনতে দ্বিগুন পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে। তার ভাষ্য দুই ট্র্যাক বালু পাকা রাস্তা হতে আধা কিলোমিটার দুরে ভ্যান বা ট্রলিতে করে আনতে তার ২০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ বেশি দিতে হয়েছে। উপজেলায় বালু পাওয়া গেলে অনেক টাকা সাশ্রয় হত।
বসত-বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলে ভাল মানের বালুর একান্ত প্রয়োজন। স্থানীয় ভাবে বাড়ির আশপাশ থেকে মেশিনের সাহায়্যে বালু উত্তোলন করা যেতে পারে বলেন রাজমিস্ত্রী আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু সেখানো তো প্রশাসনের বাঁধা। তাই বাইরের জেলা থেকে বালু আনতে হচ্ছে। একটি ৩ হাজার বর্গ ফুটের একতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে প্রায় তিন ট্র্যাক বালুর প্রয়োজন। আর এতে ব্যয় হবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা।
স্থানীয় ভাবে বালু সংগ্রহ করে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন, ব্রিজ, কালভাট এমনকি সড়ক নির্মাণ করতে পারলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমুহের সময় কম লাগত এবং অর্থনৈতিক ভাবে অনেক সাশ্রয় হত বললেন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মান্নাফ। কিন্তু উপজেলায় বালু মহল না থাকায় সেটি হচ্ছে না। সে কারনে জেলার বাইর থেকে বালু সংগ্রহ করে কাজ করতে হচ্ছে। এতে করে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হচ্ছে। বিশ^ায়নের এই যুগে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে বালু মহলের একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, পরিশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূগর্ভস্থ হতে মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণরুপে আইনত দ-নীয় অপরাধ। এতে করে ভুমি ধসের সৃষ্টি হয়ে যানমালের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সরকারি ভাবে নিষেধ। গত এক বছরে বালু উত্তোনের অপরাধে প্রায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং শতাধিক পাইপ ও মেশিন জব্দ করা হয়েছে। বালু মহল অনুমোদনের বিষয়টি ওপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ নাজির হোসেন বলেন, তিনি সবেমাত্র এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। বালু মহলের বিষয়টি সঠিকভাবে তার জানা নাই। তবে তিনি জেনেছেন এই উপজেলার জন্য একটি বালু মহলের অনুমোদন হয়েছে। এটি এখন ইজারা দরপত্রের অপেক্ষায় রয়েছে।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com